
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা বাড়ছে বাংলাদেশে। মুক্ত সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য।
আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান সেলিয়া মের্সিয়ের শনিবার এক বার্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ প্রসঙ্গে বলেন, “গত কিছুদিন ধরে ঘটতে থাকা বিভিন্ন ঘটনা আমাদের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে সহিংসতা বাড়ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা আশা করেছিলাম যে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।”
আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শারীরিক হামলার শিকার হচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে সংবাদকক্ষে প্রতিবাদকারীরা হামলা চালাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে প্রকাশিত প্রতিবেদন মুছে ফেলার দাবীতে হামলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কারণে হামলা এবং সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিতে পুলিশের আক্রমণসহ বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে।
মাঠে কাজ করার সময় সাংবাদিকরা বাধার মুখে পড়ছে— এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আরএসএফ। যেমন, ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র আনুমানিক ২০জন সমর্থক সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এটিএন নিউজ-এর সংবাদকর্মী জাভেদ আক্তারকে আক্রমণ করে। এনটিভির হাসান জাবেদ এবং দীপ্ত টিভির আজিজুল ইসলাম পান্নু আক্তারকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এলে তাদেরও আক্রমণ করা হয়। সাংবাদিকরা ঐ সময়ে ১৯৯৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে আক্রমণ সংক্রান্ত মামলায় রায় কাভার করতে গিয়েছিলেন।
তার একদিন পরেই, ইন্ডিপেন্ডেন্ট২৪ টিভি’র মোহাম্মদ ওমর ফারুক, একাত্তর টিভি’র সাইয়েদ মাইনুল আহাসান মারুফ এবং অন্যান্য সাংবাদিকদের উপর বিক্ষোভকারীরা হামলা করে। ওই সময় তারা ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ও স্মৃতি জাদুঘর ভাঙ্গার ঘটনা কাভার করছিল। পুলিশ কোন হস্তক্ষেপ করেনি।
ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে ছয়জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয় – কিন্তু এবার পুলিশের হাতে। দ্য রিপোর্ট লাইভ-এর কাওসার আহমেদ রিপন, কালের কণ্ঠ থেকে আসিফ-উজ জামান এবং মুহাম্মদ মাহাদি, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর আজহার রাকিব, জাগো নিউজ-এর মোহাম্মাদ রাদওয়ান এবং ব্রেকিং নিউজ-এর শিমুল খানকে পুলিশ লাঠি দিয়ে পেটায়, ঘুষি এবং লাথি দেয়। আহত সাংবাদিকরা জানান, তাদের প্রেস কার্ড দেখানো সত্ত্বেও পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে।
ঢাকার বাইরে শরিয়তপুরে কয়েকজন সাংবাদিক তাদের কাজের জন্য নৃশংস প্রতিশোধের মুখে পড়েছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি, সমকাল-এর প্রতিনিধি সোহাগ খানের উপর হাতুড়ি এবং ছুড়ি দিয়ে হামলা চালানো হয়। একটি ক্লিনিকের অবহেলা নিয়ে প্রতিবেদন করায় ক্লিনিকের মালিকের ভাই এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা আক্রমণ করে। এ সময় অন্য তিনজন সাংবাদিক – নিউজ২৪ টিভি’র বিধান মজুমদার ওনি, বাংলা টিভি’র নয়ন দাস এবং দেশ টিভি’র শফিউল ইসলাম আকাশ সোহাগের সাহায্যে এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা তাদের উপরও হামলা চালায়।
“সহিংসতার এই অগ্রহণযোগ্য চক্র বন্ধ করে মিডিয়া পেশাজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওাতায় নিয়ে আসার জন্য আরএসএফ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে,” বলেন সিলিয়া মেরসিয়ের।
সূত্র : এএফপি/ ভয়েস অব আমেরিকা