
আখের রস গ্রীষ্মকালে একটি জনপ্রিয় এবং সতেজ পানীয়। পুষ্টিবিদদের মতে, পরিমিত পরিমাণে আখের রস খাওয়া সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এর কিছু উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা বিবেচনা করা উচিত।
আখের রসের উপকারিতা:
* পানিশূন্যতা দূর করে: গরমে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। আখের রস শরীরে দ্রুত জল সরবরাহ করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
* তাত্ক্ষণিক শক্তির উৎস: এতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ) থাকে যা দ্রুত শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
* প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে: আখের রসে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান থাকে যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক।
* হজমক্ষমতা বাড়ায়: এতে পটাশিয়াম থাকায় হজম রসের ক্ষরণ বাড়ে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
* কিডনির জন্য উপকারী: আখের রস প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি মূত্রাশয়ের সংক্রমণ কমাতেও সহায়ক।
* লিভারের জন্য ভালো: জন্ডিসের মতো লিভারের সমস্যায় আখের রস উপকারী বলে মনে করা হয়। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
* ত্বকের জন্য উপকারী: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আখের রসের ক্ষতিকর দিক:
* উচ্চ চিনিযুক্ত: আখের রসে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
* ওজন বৃদ্ধি: উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত consumption ওজন বাড়াতে পারে।
* জীবাণুর সংক্রমণ: রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি হওয়া আখের রস পান করলে পেটের সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
* দাঁতের সমস্যা: অতিরিক্ত চিনি দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটির কারণ হতে পারে।
* পলিকোসানলের উপস্থিতি: আখের রসে পলিকোসানল নামক একটি উপাদান থাকে যা কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা, মাথা ঘোরা ও পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে।
* রক্ত পাতলা করতে পারে: পলিকোসানল রক্ত পাতলা করার কাজ করতে পারে, যা আঘাত লাগলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পুষ্টিবিদদের মতামত:
পুষ্টিবিদরা সাধারণত পরিমিত পরিমাণে এবং পরিষ্কার পরিছন্নভাবে তৈরি আখের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন। ডায়াবেটিস রোগী, অতিরিক্ত ওজনযুক্ত ব্যক্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রাস্তার খোলা জায়গার আখের রস এড়িয়ে চলা এবং তাজা রস পান করা সবসময়ই ভালো। মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে আখের রস পান করা যেতে পারে, তবে এটিকে নিয়মিত পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
মোটকথা, গরমে আখের রস একটি রিফ্রেশিং পানীয় হলেও এর উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক উভয়ই রয়েছে। তাই বুঝেশুনে এবং পরিমিত পরিমাণে এটি গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।