
ইসলাম এমন কিছু আমল ও দোয়া বর্ণিত আছে, যেগুলোকে অভাব-অনটন দূর করার এবং রিজিক বৃদ্ধির উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া উল্লেখ করা হলো:
কোরআনের আমল:
* সূরা ওয়াকিয়াহ তিলাওয়াত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ তিলাওয়াত করবে, তাকে কখনো অভাব স্পর্শ করবে না। (মুসনাদে আবি ইয়ালা)
* ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা): বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন: “অতএব আমি বললাম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগান তৈরি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।” (সূরা নূহ, আয়াত ১০-১২)
* ছোট একটি ইস্তিগফার: “আস্তাগফিরুল্লাহ।”
* অন্যান্য ইস্তিগফার: “আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।”
* আয়াতুল কুরসী: প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করা রিজিক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
দোয়াসমূহ:
* নবী (সাঃ) কর্তৃক শেখানো দোয়া:
* “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া আ’উযুবিকা মিন আযাবিল ক্বাবরি।” (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় চাই এবং কবরের আযাব থেকেও আশ্রয় চাই।) (সুনানে আবু দাউদ)
* “আল্লাহুম্মাকফিনী বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা আম্মান সিওয়াক।” (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল রুজি দ্বারা হারাম রুজি থেকে বাঁচান এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে অভাবমুক্ত করুন।) (সুনানে তিরমিযী)
* “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাক্কুল মুবীন।” (এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা।) (বিভিন্ন ফাযায়েলের কিতাবে এর উল্লেখ পাওয়া যায়)
* অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া:
* “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২০১) (এই দোয়ায় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাওয়া হয়েছে, যা রিজিককেও অন্তর্ভুক্ত করে।)
* বেশি বেশি “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম” পাঠ করা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এই দুটি বাক্য জিহ্বায় হালকা কিন্তু মিজানের পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়।
অন্যান্য আমল:
* তাকওয়া (আল্লাহভীতি): আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না।” (সূরা আত-তালাক, আয়াত ২-৩)
* তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা): খাঁটিভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথাযথভাবে ভরসা করতে পারো, তবে তিনি তোমাদেরকে সেভাবে রিজিক দেবেন যেভাবে তিনি পাখিদেরকে দেন; তারা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং সন্ধ্যায় পেট ভরে ফিরে আসে।” (সুনানে তিরমিযী)
* দান-সাদকা করা: দান-সাদকা করলে সম্পদ কমে না, বরং আল্লাহ তা’আলা তাতে বরকত দান করেন এবং অভাব দূর করেন।
* আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা: আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে রিজিক বৃদ্ধি পায় এবং হায়াত বাড়ে।
* সময়মতো সালাত আদায় করা: সালাত আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন করে এবং রিজিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
* কাজের সন্ধান করা ও হালাল উপায়ে উপার্জন করা: শুধু দোয়া করলে হবে না, হালাল উপায়ে উপার্জনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা চেষ্টা ও পরিশ্রমকারীকে পছন্দ করেন।
মনে রাখতে হবে, এসব আমল ও দোয়ার পাশাপাশি আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা জরুরি। তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য ধরে আমল করে যেতে হবে এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ তা’আলাঅবশ্যই সাহায্য করবেন।