
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ভাই-বোন: দুপুরে বোনের দাফন, রাতে চলে গেল ছোট ভাইও
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ হওয়া দুই ভাই-বোন নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম (১৩) ও আরিয়া নাশরাফ নাফি (৯)–এর মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে একটি পরিবার। সোমবার রাতে বড় বোন নিঝুম মারা যাওয়ার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছোট ভাই নাফিও না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।
মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা শেষে নিঝুমকে দাফন করা হয় উত্তরার কবরস্থানে। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আসে ছোট ভাই নাফির মৃত্যুসংবাদ। দুই সন্তানকে একে একে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাদের বাবা-মা।
নিহত নিঝুম ও নাফির গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে। তারা রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়ায় বসবাস করতেন। বাবা আশরাফুল ইসলাম নিরবের স্বপ্ন ছিল সন্তানদের বড় করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানো। সে স্বপ্নই যেন মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
নাজিয়া মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর তার ছোট ভাই নাফি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। সোমবার দুপুরে স্কুল প্রাঙ্গণে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে গেলে তারা দুজনই দগ্ধ হয়। নিঝুমের শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেলে তাকে দ্রুত শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ছোট ভাই নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও বাঁচানো যায়নি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, নিঝুমের লাশ ভোলায় নেওয়ার কথা থাকলেও ভাইয়ের চিকিৎসার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই উত্তরাতেই জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। কিছুক্ষণ পর রাতেই ছোট ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছায়।
ভোলার গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দাদা, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কেউই মেনে নিতে পারছেন না এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা। দুই সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবার চোখে অন্ধকার, সংসারের স্বপ্ন যেন থেমে গেছে এক ঝটকায়।
নিঝুমের চাচা হাসান বলেন, “ভালো শিক্ষার আশায় ভাই নিরব ১৫-১৬ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। নিজের সব আশা-ভরসা ছিল এই সন্তানদের ঘিরে। আজ সব শেষ। সুন্দর একটা সংসার মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে গেল।”
২০২২ সালে সর্বশেষ বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল নিঝুম ও নাফি। কে জানত, সেটাই হবে তাদের শেষ দেখা!