ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক নাটকীয় ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড়ে। হর্ন বাজাতে বাজাতে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি মাইক্রোবাস স্থানীয়দের সন্দেহের জন্ম দেয়। কিছুটা পেছনে আরেকটি মাইক্রোবাস সেটিকে ধাওয়া করছিল। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় স্থানীয়রা রাস্তার উপর গাছ ফেলে প্রথম গাড়িটিকে আটকে দেয়।
গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিলেও তাঁদের গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না, ফলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। তাঁদের পালানোর চেষ্টাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা তাঁদের আটক করে মারধর শুরু করে।
এ সময় পেছনের মাইক্রোবাসটিও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এতে থাকা প্রকৃত র্যাব সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে ভুয়া র্যাবদের ছাড়িয়ে নিতে চাইলে জনতা তাঁদের ওপরও চড়াও হয়, কারণ অনেকেই তাঁদেরও ভুয়া ভেবে ভুল করেন। পরে পুলিশ ও র্যাব যৌথভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উভয় পক্ষকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নগরকান্দা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই আমীরুল ইসলাম জানান, আটকদের থানায় আনার পর র্যাব-১০ এর সদস্যরা তাঁদের ফরিদপুর ক্যাম্প থেকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানায় হস্তান্তর করেন।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, আটক ব্যক্তিরা র্যাব পরিচয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—স্বপন খান (৪৫) শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে, মিন্টু গাজী (৪৫) চাঁদপুর সদর থেকে, মো. সাইফুল ইসলাম (৩০) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে, মো. জামিল (৩২) মাদারীপুরের কালকিনি থেকে এবং দিদার (২৯) ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম জানান, র্যাবের হেডকোয়ার্টার থেকে একটি দল অভিযুক্তদের ধাওয়া করে আসছিল। কিন্তু অনেক র্যাব সদস্য সাদাপোশাকে থাকায় স্থানীয়রা তাঁদেরও ভুল বুঝে হামলা করেন।
র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁরা শ্রীনগর থেকে অভিযুক্তদের অনুসরণ করছিলেন। তারা এক্সপ্রেসওয়ের টোল পার হয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। তিনি বলেন, “জনতা যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারীদের মারছিলেন, তখন আমরা তাঁদের জীবন রক্ষায় এগিয়ে যাই। প্রথমে আমাদেরও ভুল বোঝায় কিছু ঘটনা ঘটে, তবে তা গুরুতর নয়।”
ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত র্যাব-পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
