
নবীজি (সা.) সমগ্র সৃষ্টির জন্য ছিলেন রহমতের উৎস। তাঁর দয়া ও মমতা শুধু মানুষের প্রতিই নয়, পশুপাখি ও সব জীবের প্রতিও সমানভাবে প্রসারিত ছিল। তবে বিড়ালের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা ইসলামে প্রাণীর অধিকারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে।
নবীজির অজুর পানিতে বিড়ালের পান করা
নবীজি (সা.) বিড়ালকে গৃহস্থালির অন্তর্ভুক্ত একটি পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেছেন— “বিড়াল নাপাক নয়। এটি তোমাদের আশপাশে ঘন ঘন ঘুরে বেড়ায়” (সুনানে আবু দাউদ: ৫৭)। তাই বিড়ালের মুখ লাগা পাত্র থেকে পানি পান করা বা খাবার খাওয়া বৈধ, তবে বিড়ালের মাংস ভক্ষণ হারাম।
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন— একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে অজুর পানি ঢেলে দিতে বললেন। পানি প্রস্তুত হলে তিনি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গেলেন। ফিরে এসে দেখলেন, একটি বিড়াল সেই পানি পান করছে। নবীজি (সা.) অপেক্ষা করলেন, যতক্ষণ না বিড়ালটি তৃপ্তি সহকারে পান শেষ করে। পরে তিনি বললেন— “বিড়াল গৃহস্থালির প্রাণী, এটি কিছু অপবিত্র করে না” (তাবরানি)।
সাহাবিদের সঙ্গে বিড়ালের সখ্যতা
তাবেয়ি দাউদ ইবনুস সালিহ (রহ.) তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন— একবার তিনি খাবার নিয়ে হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে যান। তখন তিনি নামাজে ছিলেন এবং ইশারায় খাবারটি রাখতে বলেন। এ সময় একটি বিড়াল এসে খাবার থেকে কিছু খায়। নামাজ শেষে আয়েশা (রা.) একই স্থান থেকে খান এবং বলেন— “রাসুল (সা.) বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়; এটি তোমাদের পাশে বসবাসকারী প্রাণী। আমি নিজেও তাঁকে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে অজু করতে দেখেছি” (সুনানে আবু দাউদ: ৭৬)।
আবার একবার হজরত আবু কাতাদা আনসারি (রা.) তাঁর পুত্রবধূর বাসায় গেলে একটি বিড়াল পাত্র থেকে পানি পান করতে চায়। তিনি পাত্রটি কাত করে বিড়ালটিকে সহজে পানি পান করান। পুত্রবধূ অবাক হলে তিনি বলেন— “রাসুল (সা.) বলেছেন, বিড়াল অপবিত্র নয়; এটি আমাদের চারপাশে বসবাসকারী গৃহস্থালির প্রাণী” (মুয়াত্তা মালিক)।
বিড়ালপ্রেমী সাহাবি
সাহাবিদের মধ্যে বিড়ালের প্রতি বিশেষ মমতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন হজরত আবু হুরায়রা (রা.)। তাঁর আসল নাম ছিল আবদুর রহমান, তবে সবসময় তাঁর সঙ্গে একটি বিড়ালছানা থাকত। এ কারণে নবীজি স্নেহভরে তাঁকে “আবু হুরায়রা” বা “বিড়ালছানার বাবা” উপাধি দেন।