
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এ ঘোষণা আসার পর থেকেই মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। শনিবার (দ্বিতীয় দিন) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৮টি দল ও জোটের নেতারা অংশ নেন। নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বৈঠকে বলেন, “আমরা যারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সবাইকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।” তিনি আরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন বক্তব্য বা বিবৃতি থেকে বিরত থাকতে।
শনিবারের বৈঠকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়—প্রথমে জন অধিকার, পিপলস পার্টি, ন্যাপ ভাসানী ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য; এরপর আমজনতা দল ও গণফোরাম, এনডিএম, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে। বৈঠকে তারেক রহমান সমমনা দলগুলোকে সর্বশক্তি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামার আহ্বান জানান।
আলোচনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান দল ও জোটগুলোকে ৩১ দফা কর্মসূচি জনগণের সামনে তুলে ধরতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিল, তারা যেন আগামী দিনেও ঐক্যবদ্ধ থাকে। মতভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে।”
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ বলেন, “তারেক রহমান ধৈর্য ধরে ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সবাইকে সতর্ক করেছেন যেন ঐক্যে ফাটল ধরতে না পারে।” এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন জানান, নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকার ওপরও জোর দেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “ঐক্যে ফাটল ধরলে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ যদি একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সুযোগ তৈরি হবে। সবার উচিত ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে একসঙ্গে পথচলা।”
আসন বণ্টন প্রসঙ্গে বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি, তবে শরিকদের যথাযথ মূল্যায়নের বিষয়টি নেতারা তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারেক রহমান শুধু বলেছেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এখন ঐক্যই সবচেয়ে বড় শক্তি।”