
উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৯টায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিপৎসীমার চেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহ রেকর্ড করেছে।
এর আগে বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে পানি প্রথমে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে, পরে কমে ৪ সেন্টিমিটারে নামে। তবে রাতের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ভোরে তা আবার বেড়ে ১১ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছে যায়। টানা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিপৎসীমার ওপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারী ও লালমনিরহাটের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৪৫টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি, তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।
নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের বহু গ্রাম পানির নিচে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলেও পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান, হলদিবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী ও শৈইলমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ীসহ বহু এলাকা প্লাবিত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরুতে দুই দফা পানি বৃদ্ধির পর এটি তৃতীয় দফার বন্যা। তারা ত্রাণের পরিবর্তে স্থায়ী সমাধান হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন। অনেক পরিবার রান্না বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে, গবাদিপশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, নদীর পানি বাড়ায় বিভিন্ন চরের শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর চ্যানেল বন্ধে কাজ চলছে, পাউবোও এতে সহযোগিতা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে, এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ডালিয়া ব্যারাজের সব ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফার বন্যা। প্রথমটি হয়েছিল ২৯ জুলাই এবং দ্বিতীয়টি ৩ আগস্ট। এবার ১৩ আগস্ট থেকে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিপদের আশঙ্কা এখনও কাটেনি।