
বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী পাচারের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ভারতে পাচারকৃত একাধিক কিশোরীকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সক্রিয় আন্তদেশীয় মানব পাচার চক্র আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। খবর: এনডিটিভি
ভারতের হায়দরাবাদে পুলিশের অভিযান চালিয়ে এক বাংলাদেশি কিশোরীকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য হওয়ার আগে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি গত এক মাসে বাংলাদেশি নারীদের উদ্ধার হওয়া চতুর্থ ঘটনা। খাইরতাবাদ, চাদেরঘাট এবং বান্দলাগুডার বিভিন্ন যৌনপল্লি থেকে পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করেছে।
এর আগে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় একটি যৌনর্যাকেট থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪ বছরের বাংলাদেশি কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, তিন মাসে কমপক্ষে ২০০ পুরুষ তাকে যৌন নির্যাতন করেছে। মানব পাচার বিরোধী ইউনিট (AHTU), এনজিও এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং হারমনি ফাউন্ডেশনের যৌথ অভিযানে মীরা-ভায়ন্দর ভাসাই-ভিরা এলাকায় ২৬ জুলাই একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
ভারতের হায়দরাবাদ শহরের যৌনপল্লি থেকে বাংলাদেশি নারীদের উদ্ধারের ঘটনা নতুন নয়। ২০০০ সালের শুরু থেকেই সংঘবদ্ধ মাফিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব যৌনপল্লিতে আটকা পড়া নারীদের উদ্ধার করছে পুলিশ। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল থেকেও নারীদের এনে যৌনপেশায় নামানো হচ্ছে।
এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ থেকে পাচারের ক্ষেত্রে, নারীরা সীমান্তে এজেন্টদের সাহায্য নিয়ে স্থল বা নৌপথে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। পাচার চক্রের হোতাদের নেটওয়ার্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা দালাল ও অন্যান্যকে অর্থ দিয়ে নিয়োগ করে।”
পাচারের শিকার নারীদের চাকরির প্রলোভন ও ভালো বেতনের আশ্বাস দেখিয়ে ভারতে আনা হয়। কর্মকর্তা আরও জানান, “বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে চরম দারিদ্র্য থাকায়, এজেন্টরা অসহায় নারী ও কিশোরীদের খুঁজে বের করে। এরপর তাঁদের ভালো জীবিকার প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে ভারতে পাঠানো হয়। ভারতে পৌঁছানোর পর স্থানীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়।”
অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশ থেকে পুরুষ, নারী ও শিশুরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। ধরা না পড়া পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের বাঙালি পরিচয় ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।”
সেন্ট্রাল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড (CSWB) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে বাণিজ্যিক যৌনশোষণের শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে ২.৭ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীরা কলকাতা, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বাইসহ বিভিন্ন শহরে দালালদের কাছে বিক্রি করা হয়। হায়দরাবাদে পাচার চক্রের হোতারা আত্তাপুর, বান্দলাগুডা, চিন্তালমেট, হিমায়াতসাগর রোড এবং চম্পাপেটে সক্রিয়ভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।