
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’-এর সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেল ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবিরও উপস্থিত ছিলেন।
তবে ঘোষিত এই প্যানেল ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের একজন কর্মী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামির নামও রয়েছে। এছাড়া প্যানেলে স্থান না পাওয়ায় কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ঘোষিত প্যানেল অনুযায়ী সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মীর মশাররফ হল ছাত্রদলের সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ সাদী হাসান। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আছেন ১৩ নম্বর ছাত্রী হলের সভাপতি তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে সাজ্জাদুল ইসলাম এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে আঞ্জুমান আরা ইকরাকে মনোনীত করা হয়েছে।
এছাড়া সহসমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন (নারী) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রোকেয়া হল ছাত্রদলের সভাপতি কাজী মৌসুমী আফরোজ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অতীতে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ হল ছাত্রদলের সভাপতি হামিদুল্লাহ সালমান। তিনি শামীম মোল্লা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
প্যানেল ঘোষণার পর শাখা ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের অনেকেই এই প্যানেল মেনে নিতে পারেনি। ঘোষণার আগে আমরা ভাবিনি এভাবে গঠিত হবে। গ্রুপিংয়ের কারণে যোগ্য অনেকেই সঠিক জায়গা পাননি।”
তবে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর দাবি করেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীদের রাখার চেষ্টা করেছি। প্রায় ৪৮ শতাংশ নারী ভোটারকে গুরুত্ব দিয়েই জিএস পদে একজন নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অনন্যা ফারিয়া ঘোষিত প্যানেলে স্থান না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে জিএস পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই প্যানেলে কারা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবেন, সেটার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কে কার লোক। তাই আমি স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।”
এ প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, “জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে নেওয়া হচ্ছে। অনন্যা ফারিয়ার ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থীদের বাইরে অন্য কেউ জাকসু বা হল সংসদে প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র তোলার পরও যারা প্যানেলের বাইরে থাকতে চান, তাদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।