
২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নরেন্দ্র মোদিকে “দীর্ঘদিনের বন্ধু” আখ্যা দিয়ে সাক্ষাৎ করতে পেরে গর্বিত বোধ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ২৭ আগস্ট হোয়াইট হাউসে মোদিকে “ভয়ঙ্কর ব্যক্তি” বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি আরও জানান, গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনে ভারতকে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, আর সেই হুমকির পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই নয়াদিল্লি যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানায়।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েনের মূল কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জ্বালানি বাণিজ্য। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর অভিযোগ—রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনে তা পরিশোধন করে পশ্চিমা বাজারে বিক্রি করে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে এবং সর্বাধিক লাভবান হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ভারতের ওপর শুল্কহার দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করেছে। পাশাপাশি কট্টরপন্থী মার্কিন আইনপ্রণেতারা শুল্ক ১০০ শতাংশে উন্নীত করার দাবি তুলেছেন। তবে বিভিন্ন চাপ ও হুমকি সত্ত্বেও ভারত এখনো রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাচ্ছে না।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে ভারত প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যার ৩৬ শতাংশই রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের শুরুতে যেখানে প্রতি ব্যারেলে ২০–২৫ ডলার ছাড় দেওয়া হতো, এখন তা নেমে এসেছে আড়াই ডলারে। তবুও নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর এই তেল পরিশোধিত আকারে বেশি দামে পশ্চিমা বাজারে রপ্তানি করছে ভারত।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন। আগামী ৩১ আগস্ট তিয়ানজিনে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সাত বছর পর ভারত-চীন সম্পর্কে উষ্ণতার এই ইঙ্গিতকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
সব মিলিয়ে, ভূ-রাজনীতি ও জ্বালানি বাণিজ্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক জটিল মোড় নিচ্ছে। একদিকে অর্থনৈতিক কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, অন্যদিকে কৌশলগতভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার প্রচেষ্টা—নয়াদিল্লির এই ভারসাম্য রক্ষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা সফল হবে, তা এখন সবার নজরে।