কিউটিভি ডেস্ক:
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫:চট্টগ্রামের ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড থেকে পণ্য পাচার এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক স্থানীয় কয়েকজন নেতা। ঝুট ও ভাঙারি মালের আড়ালে শুল্কমুক্ত সুবিধার পোশাক, জুতা, মেশিনের যন্ত্রাংশসহ কোটি টাকার পণ্য বের করে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ইপিজেড থানা পুলিশ, কাস্টমস কর্মকর্তা ও বেপজার নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়মিত ভাগ পাচ্ছেন বলে রাষ্ট্রীয় এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ১০টি কারখানা পণ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— জে জে মিলস, প্রিমিয়ার ১৮৮৮, সেকশন সেভেন অ্যাপারেলস, এমএনসি অ্যাপারেলস, মেরিমো, মেরিমো কো. লি., ক্যান পার্ক, রিজেন্সি, প্যাসিফিক ক্যাজুয়াল ও এমজেডএম টেক্সটাইল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইপিজেডের নিরাপত্তা ব্যবস্থার শিথিলতা এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অর্থলিপ্সার কারণেই দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ইপিজেড এলাকায় দুর্বৃত্তদের প্রভাব বাড়ছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জড়িতদের নামও উঠে এসেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সুমন, ব্যবসায়ী মোর্শেদুল ইসলাম তাজু, মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি দেবাশিস পাল দেবু, শাহিন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ কর্মী শাহেদ চৌধুরী রবিন। স্থানীয় সূত্র বলছে, এদের বেশিরভাগই বর্তমানে বিদেশে পলাতক।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি ট্রাক থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়। যেমন— প্রতিটি ঝুটের গাড়ি থেকে পুলিশের জন্য ৩০০ টাকা, কাস্টমসের জন্য ৮০০ টাকা এবং বেপজার নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ৩০০ টাকা দেওয়া হয়। অন্যদিকে ভাঙারি মালবাহী ট্রাক থেকে পুলিশের জন্য ১০ হাজার, কাস্টমসের জন্য ১৫ হাজার এবং বেপজার জন্য ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়। এসব টাকার একটি অংশ নিয়মিত ইপিজেড থানার ওসির কাছে পৌঁছানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান জানান, পুলিশ, বেপজা ও কাস্টমস আলাদা তদন্ত করেছে এবং পাচার ঠেকাতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, নিয়মিতই অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক আটক করে কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়।
তবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এ সিন্ডিকেটের কারণে যেকোনো সময় ইপিজেড এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই পাচার রোধে তিনটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে— পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ইপিজেড এলাকায় গাড়ি তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা এবং কাস্টমস আউটগেটে ওজন মাপার স্কেল বসানো।


