কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হলো! তিন ভুলে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ
আজ জাতীয় স্টেডিয়ামে লেখা হতে পারত হামজা-শমিত-মোরসালিনদের ডানায় ভর করে অসাধারণ এক প্রত্যাবর্তনের গল্প। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ব্যথার বাস্তবতা—৪-৩ গোলে হেরে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ স্বপ্নের পরিসমাপ্তি।
প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য দেখিয়েও নিজেদের ভুলেই হেরে বসেছে বাংলাদেশ—এক নয়, তিন তিনটে ভয়াবহ ভুলে। শেষটিতে এসে সেই ভুল পূর্ণ হলো একেবারে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, আর সেই দৃশ্যেই যেন ধরা পড়ল হতাশার প্রতিচ্ছবি—শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা হামজা চৌধুরীর অভিব্যক্তি বলছিল সব।
স্বপ্নের শুরু, দুঃস্বপ্নের পরিণতি
ম্যাচের শুরুটা ছিল স্বপ্নময়। হংকং কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড যাকে ম্যাচের আগে তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, “ও আমাদের বেঞ্চেই থাকত”—সেই হামজা চৌধুরীই সরাসরি ফ্রি কিক থেকে প্রথম গোল এনে দেন বাংলাদেশকে।
প্রথমার্ধে সফরকারীরা ছিল কার্যত দিশেহারা। হামজার দাপটে বাংলাদেশও খেলছিল আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ফুটবল।
কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে আসে প্রথম ভুল। কর্নার থেকে বল দূর করতে গিয়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ভুলে গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। সেই গোলই যেন পরবর্তী বিপর্যয়ের বীজ বপন করে দেয়।
ভুলের পর ভুল, গোলের পর গোল
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হংকং।
৫০তম মিনিটে সোহেল রানা জুনিয়রের ভুলে বল পেয়ে গোল করেন রাফায়েল মেরকেজ—বাংলাদেশ তখন পিছিয়ে। এরপর অফসাইড ফাঁদ ভাঙতে সফল হয় প্রতিপক্ষ, মেরকেজের দ্বিতীয় গোলেই বাংলাদেশের আশা আরও ম্লান হয়।
তবে ৮৪ মিনিটে শেখ মোরসালিনের গোলে আবারও জেগে ওঠে জাতীয় স্টেডিয়াম। শিশিরভেজা বল ফসকে গেলে বজ্রগতিতে তা জালে পাঠান তিনি।
অভিষিক্ত জায়ান আহমেদের ক্রসে শেষ মুহূর্তে শমিতের হেডে সমতায় ফেরে ম্যাচ, তখন মনে হচ্ছিল, অদ্ভুত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখা হবেই!
কিন্তু ভাগ্য তখনও প্রস্তুত ছিল শেষ আঘাতের জন্য।
শেষ সেকেন্ডে সাদ উদ্দিনের ভুলে বল পেয়ে মেরকেজ পূর্ণ করেন নিজের হ্যাটট্রিক, আর বাংলাদেশের ভুলের হ্যাটট্রিকেই সমাপ্ত হয় সব আশা।
লড়াই ছিল, প্রাপ্তি নেই
র্যাঙ্কিংয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা হংকংয়ের বিপক্ষে ৩ গোল করেও জয় তো দূরের কথা, একটি পয়েন্টও জুটল না বাংলাদেশের ভাগ্যে।
হামজার দুর্দান্ত শুরু, শমিত-মোরসালিনের উচ্ছ্বাস, কাবরেরার আবেগ—সবই শেষ হলো তিনটি মারাত্মক ভুলের দায়ে।
বাংলাদেশ ফুটবল অনেক কিছুই প্রমাণ করল আজ—লড়াইয়ের সামর্থ্য আছে, কিন্তু ভুল কমাতে না পারলে জয় অধরা থেকে যায়।


