দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোররাত থেকে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলি হামলা।
গাজা সিটি ও খান ইউনিসে বিমান ও আর্টিলারি হামলায় অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, ইসরাইলি কোয়াডকপ্টার ড্রোন থেকেও বেসামরিক এলাকায় বোমা ফেলা হয়েছে। রাতভর বিস্ফোরণ ও আগুনে গাজার আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে।
মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলি ট্যাংকগুলো আল-রাশিদ সড়ক অবরোধ করে দক্ষিণ থেকে উত্তর গাজায় ফেরা বাস্তুচ্যুতদের আটকে দিচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেনারা মাঝেমধ্যে গুলি ও গোলা ছুড়ছে।
ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইলি সেনারা যেখানে অবস্থান করছে, সেসব এলাকা থেকে দূরে থাকতে।
মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার সকালে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হয়।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন,
“উভয় পক্ষ এমন এক প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে যা যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করবে।”
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়,
“এই চুক্তির লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তি, দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বন্দি বিনিময় নিশ্চিত করা।”
অন্যদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন,
“আজ ইসরাইলের জন্য এক মহান দিন। বন্দিমুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
তিনি জানান, বৃহস্পতিবারই তার মন্ত্রিসভা বৈঠক বসবে চুক্তি অনুমোদনের জন্য, যাতে “ইসরাইলি বন্দিদের ঘরে ফেরানো যায়।”
মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে।
চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস ২০ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে, বিনিময়ে ইসরাইল ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ছেড়ে দেবে।
এছাড়া প্রায় ৪০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাবে।
তবে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের সীমানা এখনো স্পষ্ট নয়।
চুক্তির বাকি ধাপ—ইসরাইলের পূর্ণ প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন—পরবর্তী আলোচনায় নির্ধারিত হবে।
দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক অভিযানে ইসরাইল আক্রান্ত হওয়ার পর শুরু হয় এই যুদ্ধ।
হামাস জানায়, এটি ইসরাইলের দখলনীতি, আল-আকসা মসজিদে লঙ্ঘন, গাজা অবরোধ ও বন্দিদের ওপর নির্যাতনের জবাব।
প্রথম দিনেই ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড ভেঙে পড়ে। হামাসের হামলায় ১,১৮০ জন নিহত হয়, যাদের প্রায় অর্ধেকই বেসামরিক নাগরিক।
জবাবে ইসরাইল গাজায় অবিরাম বিমান ও স্থল অভিযান চালায়, যা টানা দুই বছর ধরে চলে।
ধ্বংস হয়ে যায় গাজার প্রায় সব স্থাপনা—বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও গির্জা।
ইসরাইলি সেনা তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে, যার প্রায় ৮০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অভিযানে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
সূত্র: মিডলইস্ট আই, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, আল জাজিরা


