কিছু নাম উচ্চারণে শব্দ হয়, কিছু নাম উচ্চারণে নীরবতা। জ্যাক সজল—দ্বিতীয় দলে পড়ে, কারণ এই নাম উচ্চারিত হলে শব্দ থেমে যায়, শুরু হয় অনুভবের বহমানতা। তিনি সেই অভিনেতা, যিনি ক্যামেরার দিকে তাকান না, তাকিয়ে থাকেন চরিত্রের ভেতরের ফাটলে—সেখানে জমে থাকা শব্দগুলো যা সংলাপে নেই, যা কেবল হৃদয়ের অস্পষ্ট উচ্চারণ।

জ্যাক সজল | ছবি সংগৃহীত
সেলিব্রিটি নয়, তিনি শিল্পী। তারকা নয়, বরং অন্তর্দাহিত এক পুড়ে যাওয়া চরিত্র। ‘পাঁজর ৩’, ‘কাক’, ‘গার্মেন্টস যুদ্ধা’—প্রতিটি নাটকে তার নিঃশব্দ উপস্থিতি দর্শকের মনে চিহ্ন রেখে যায়। তিনি চরিত্র ‘অভিনয়’ করেন না, চরিত্রের মতো নিঃশ্বাস নেন।
জ্যাক সজলের অভিনয় কেবল সংলাপের নয়। চোখের পলক, ঠোঁটের কাঁপুনি, হাঁটাচলার ছন্দ—প্রতিটি মুহূর্তে চরিত্রের ভেতরের নাটক ফুটে ওঠে। সংলাপ নয়, দর্শকের মনে থাকে চরিত্রের ছায়াময় উপস্থিতি।
২০২৫ সালের উত্তরা মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির সময়, দেশের মিডিয়া শোক সংবাদে মুখর—তবে তিনি নীরবে একজন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন, রক্তের বিরল গ্রুপ দানের মাধ্যমে। বাস্তব জীবনেও তিনি চরিত্রের মতোই নীরব নায়ক।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি চরিত্র খুঁজি, যা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসেরও বিরোধী হতে পারে।” এই সততা তাকে আলাদা করে—নিজের নৈতিকতা ছাড়িয়ে চরিত্রের সত্যকে সত্যি করে তোলা। সংলাপ মুখস্থ নয়, তিনি তা নিজের ভেতরে গলে চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেন।
জ্যাক সজল শুধু অভিনেতা নন, তিনি শিল্পের এক নতুন ধারার প্রতিনিধি। স্টারডম নয়, ‘বোধ’ তার পরিচয়। তিনি দর্শককে পড়েন, ভালোবাসেন, সমালোচনা গ্রহণ করেন, এবং প্রতিটি ভাঙা মুহূর্তে নিজেকে খুঁজে পান।

জ্যাক সজল | ছবি সংগৃহীত
জ্যাক সজল আমাদের শেখান—“অভিনয় শুধু প্রকাশ নয়, অভিনয় হচ্ছে নিজের আত্মাকে নিভিয়ে চরিত্রের আলো জ্বালানো।” তিনি প্রমাণ করেছেন, নীরবতার মধ্যেও চরিত্রের আগুন জ্বলে, এবং অভিনয় এক দীর্ঘ শ্বাসের মতো অনুভূত হয়।


