জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিটি উপদেষ্টা এখন নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত। দেশের মানুষের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আজ সেই সরকারই জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। তারা শিক্ষাব্যবস্থারও বিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সামান্তা শারমিন বলেন, “এই সরকারকে আমরা শিক্ষক, ছাত্র, চিকিৎসকসহ জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু আজ তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতি ভেঙে ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কিনছে, অথচ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে বললে বলে সরকারের টাকা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা কমিশন গঠন না করায় প্রমাণিত হয়েছে যে এই সরকারও শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে। শেখ হাসিনা শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন, অথচ এই সরকার তা রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।”
শিক্ষাব্যবস্থার সংকট প্রসঙ্গে সামান্তা শারমিন বলেন, “শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা ও ভাতাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়েছে। মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার জন্যও এখন শিক্ষকদের দাবি জানাতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টার সমালোচনা করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম তিনি শিক্ষক বলে শিক্ষকদের অবস্থা বুঝবেন। কিন্তু দেখা গেল, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পরও তার কার্যকলাপে আন্তরিকতার অভাব। তিনি কারও সঙ্গে সময় দিতে চান না, অথচ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের উপদেষ্টাদের সবসময় জনগণের নাগালে থাকতে হয়।”
শিক্ষকদের উপর পুলিশের দমন-নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয়করণ তো দূরের কথা, সামান্য বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা বাড়ানোর দাবি তুলতেই শিক্ষকদের রাস্তায় মেরেধরে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এনসিপি শিক্ষকদের পাশে ছিল, আছে, থাকবে।”
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিলেও কোনো আশ্বাস না পেয়ে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
দুপুরে পুলিশের জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। একাংশ শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়, অন্য অংশ সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চের দাবি তোলে।


