অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের দিন বলেন, “আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।” তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই সনদ সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রায় আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর চূড়ান্ত করেছে জুলাই জাতীয় সনদ। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদে স্বাক্ষর করেছে। সনদে সংবিধান, নির্বাচন ও বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমনসহ বেশ কিছু সংস্কারের সুপারিশমালা থাকলেও শ্রমিক অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও নারীর অধিকার সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো সনদে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব ছিল, কিন্তু তা হয়নি। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বড় অংশ পূরণ হয়নি।
অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, কয়েকটি সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এই কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারে।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার উপেক্ষিত
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি কমিটি ৫ মে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনাকে আরও জনবান্ধব করার সুপারিশ করা হয়, যেমন:
বিদ্যমান স্বাস্থ্য আইন সংস্কার
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজীকরণ
শহুরে জনগোষ্ঠীর জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন
স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যসচেতনতার জন্য হেলথ এডুকেশন চালু করা
কমিটি সুপারিশ করেছিল এই পদক্ষেপগুলো স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হোক।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদিও জুলাই সনদ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, বাস্তব জীবনে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূর্ণ করতে এখনও অনেক কাজ বাকি।


