মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার ভারতের ওপর চাপ দিয়ে বলছেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত বন্ধ করুক, যদিও ভারত সরাসরি এমন কোনো আশ্বাস দেয়নি। ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন, কিন্তু বাণিজ্য ও কূটনীতিক ক্ষেত্রে এই বন্ধুত্বের বাস্তব প্রভাব প্রায় নেই।
গত ২৭ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো ৫০% বাণিজ্য শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যার প্রভাব সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের রফতানিতে ২০% হ্রাস হয়েছে। চলতি চার মাসে রফতানি পতনের পরিমাণ ৪০%। দিল্লিভিত্তিক গবেষক অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ভারতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, মোদী তাকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কেনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট করেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি এবং ভারত তার নীতি নির্ধারণে ভোক্তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে। রাশিয়া এবং ইরানকে সরাসরি তুলনা করা যায় না। ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক ৭০ বছরের মজবুত ভিত্তি উপর দাঁড়িয়ে, যা কোল্ড ওয়ারের সময় থেকে প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে দৃঢ়।
গত অর্থবর্ষে ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের রফতানি মাত্র ৪.৯ বিলিয়ন ডলার। তেলের ক্ষেত্রে, ভারতের রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল পাওয়ার সুবিধা ক্রমেই কমছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেলের আমদানি ৭৮.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদী যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে পারবেন কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে প্রাচীন বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে তেল বন্ধ না করলে, ট্রাম্পের চাপের মধ্যে ভারতীয় বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি জটিল হয়ে যায়।
ট্রাম্পের এই ধারাবাহিক মন্তব্য ভারতের জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক দ্বিধার সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতকে এখন স্বল্পমেয়াদে স্পষ্ট নীতি ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন।


