নির্বাচনের আগে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী, কয়েক মাসেই দেখতে পাবেন: তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সতর্কবার্তা
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, “সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে। কয়েক মাসের মধ্যেই আপনারা বড় ধরনের সংঘাত দেখতে পাবেন।”
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুফি গবেষণাভিত্তিক সংগঠন ‘মাকাম’ এ সংলাপের আয়োজন করে।
ধর্মীয় ইস্যু যুক্ত হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে
মাহফুজ আলম বলেন,
“আমি আশঙ্কা করছি, যদি রাজনৈতিক সংঘাতের সঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ যুক্ত হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার দৃঢ় অবস্থানের কারণে এখনো বড় সংঘাত শুরু হয়নি; কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে।
“আওয়ামী লীগ দরবারের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করছে”
ধর্মীয় সংগঠন ও খানকাহগুলোর রাজনৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন,
“শুনতে পাচ্ছি আওয়ামী লীগ ‘দরবারগুলোর’ সঙ্গে সংযোগ করতে চায়—এ ধারণা দিতে যে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিয়েছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামের বিভিন্ন ধারাকে ব্যবহার করেছে। কেউ কওমি, কেউ সুন্নি—এভাবে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক শক্তি অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে।
“রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ গেলেও সামাজিক ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে”
মাহফুজ আলম বলেন,
“রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ হয়তো কিছুটা গেছে, কিন্তু সামাজিক ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। দেশের ধর্মীয় ধারাগুলোর মধ্যে সংলাপ না হলে রাষ্ট্র শঙ্কার মধ্য দিয়ে এগোবে।”
তিনি জানান, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যেও বিভিন্ন তরিকা ও মতবাদের বিভাজন আছে। এ বিভাজন দূর না করলে সামাজিক সংকট ঘনীভূত হবে।
“বিদেশিও এখানে খেলছে”
তথ্য উপদেষ্টা অভিযোগ করেন বিদেশি দূতাবাসগুলোরও ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন,
“কিছু দূতাবাস চায়, মাজারগুলো ধ্বংস করা হোক। এখানে আন্তর্জাতিক আদর্শিক প্রভাবও কাজ করছে।”
সহিংসতা প্রতিরোধে আইনি পদক্ষেপ জরুরি
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মাজারে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“মাজারে হামলার পর অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলার শিকার মাজার কর্তৃপক্ষ মামলা করুন। সহিংস সংস্কৃতি চলতে দেওয়া যাবে না।”
উপসংহার
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, সামনে দেশ আরও রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। ধর্মীয় ইস্যু দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।


