২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে হঠাৎ আক্রমণ এবং ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “এই নির্বাচন বানচালের জন্য ছোট শক্তি নয়, বড় শক্তি নিয়েই চেষ্টা হবে। দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার জন্য হঠাৎ আক্রমণ আসতে পারে—সেটার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর যমুনায় নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রথম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় নির্বাচনবিষয়ক করণীয় নির্ধারণ, মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব বণ্টন এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
পরবর্তীতে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
“শুধু শারীরিক নয়, সাইবার আক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে”
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আশঙ্কা কেবল শারীরিক সহিংসতা বা নাশকতা নয়; বরং সাইবার আক্রমণ, ভুয়া খবর ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বিদেশি প্রপাগান্ডা ছড়ানোর অপচেষ্টাও এর অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বলেন, “এই আক্রমণ বলতে শুধু মাঠের হামলা নয়—ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, নির্বাচন বয়কটের পরিবেশ তৈরি এবং বিভ্রান্তি তৈরি করাও আক্রমণের অংশ হতে পারে। পতিত স্বৈরশাসক ও তার সহযোগীরা এ ধরনের তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।”
চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ক প্রথম সভায় চারটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম:
-
মাঠ প্রশাসনের পদায়ন:
যেসব কর্মকর্তা আগের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন—তাদের কেউই এবার নির্বাচন দায়িত্বে থাকবেন না। এতে ডিসি, এডিসি ও ইউএনওর মতো প্রশাসনিক ভূমিকার কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত। -
পুলিশ প্রশাসনের বদলি:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সভায় জানান, একই পদক্ষেপ পুলিশের ক্ষেত্রেও নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ৬৪ জেলার এসপিদের তালিকা করা হয়েছে। -
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ:
ভোটগ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হবে। -
ডিজিটাল নিরাপত্তা কৌশল:
সাইবার স্পেসে ভুয়া তথ্য (ডিজইনফরমেশন) মোকাবিলায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন এবং ফ্যাক্ট-চেকিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সভায় বলেন, “এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা এই সরকারের দায়িত্ব। নির্বাচন ভণ্ডুলের যেকোনো ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে দমন করা হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।”


