ভুয়া কোম্পানি খুলে ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ ও বিদেশে পাচার: সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদকে ঘিরে নতুন চাঞ্চল্য
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অর্থ পাচার ও ভুয়া কোম্পানির নামে হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে। তিনি ২৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে বিভিন্ন মাধ্যমে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ-এর চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে বলা হয়, জাবেদ ২০১৪ সালে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া কোম্পানি গঠন করেন এবং সেইসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেন। এরপর হুন্ডি, ওভার ইনভয়েসিং, ফেক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও শেল কোম্পানি ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ সরিয়ে নেন।
সরকারের পতনের পর বেরোতে থাকে দুর্নীতির চিত্র
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংক খাত ও সরকারি পর্যায়ের দুর্নীতি ও লুটপাটের অজস্র নথি প্রকাশ পেতে থাকে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত দ্রুততর হলে এই তথ্য বেরিয়ে আসে।
বিদেশে অর্থ পাচারের পদ্ধতি: রিপোর্টে বিস্ময়কর বিশ্লেষণ
বিএফআইইউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়—
-
জাবেদ ও তার সহযোগীরা ২৩১ ব্যক্তি ও ১২টির বেশি ভুয়া কোম্পানি ব্যবহার করেছেন।
-
ঋণের টাকা আরামিট গ্রুপের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে পরে তুলে ফেলা হয়।
-
দুবাইয়ে জেবা ট্রেডিং কোম্পানির নামে পাঠানো টাকা পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
-
ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এলসি খুলে হংকং হয়ে অর্থ পাচার করা হয়।
১২০০ কোটি টাকায় দুবাইয়ে ২২৬ ফ্ল্যাট!
সিআইডির মানি লন্ডারিং তদন্তে উঠে আসে জাবেদের দুবাইয়ে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার প্রমাণ। সংস্থাটি জানায়—
| তথ্য | পরিমাণ |
|---|---|
| পাচারকৃত অর্থ | ১২০০ কোটি টাকা |
| কেনা ফ্ল্যাট | ২২৬টি |
| সম্পত্তির অবস্থান | বুর্জ খলিফা, বার্শা সাউথ, থানিয়া, গালফ কমার্শিয়াল, জাবাল আলী প্রভৃতি এলাকা |
| স্ত্রী রুকমিলা জামানের সম্পত্তি | ২টি |
এক মোবাইল নম্বরে ১২টি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
জাবেদের নির্দেশে আব্দুল আজিজ নামে একজন কর্মচারীর একটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ইউসিবি ব্যাংকের ৮ শাখায় ১২টি ভুয়া কোম্পানির ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। কোম্পাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
লুসেন্ট ট্রেডিং, আরামিট ফুটওয়্যার, ক্যাপিটাস অ্যাসেট, জেনেসিস ট্রেড ম্যানেজমেন্ট, পদ্মা ট্রেডিং, ভিশন ট্রেডিংসহ আরও বেশ কিছু ফেক প্রতিষ্ঠান।
সিআইডির মামলা ও জাবেদের নিস্তব্ধতা
মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়ায় ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় সিআইডি মামলা করে। তবে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে জাবেদের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


