ঢাকা, ১ নভেম্বর ২০২৫: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, বর্তমানে দেশের জন্য জুলাই সনদের প্রয়োজনে তিনি একমত নন। তাঁর বক্তব্য, এখন আগে দরকার একটি কার্যকর সংসদ — যে সংসদ সত্যিকারের গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করবে এবং সংবিধানিক পথেই দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে।
শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মেজর (অব.) হাফিজ এসব কথা বলেন। সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি আরও সতর্ক করেন যে, কেউই মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে হেয় করতে পারবে না এবং একাত্তরের চেতনাকে নস্যাৎ করার যে কোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, “আমাদের কাছে জুলাই সনদের কোনো বিশেষ প্রয়োজন নেই; প্রয়োজনীয় তা হলে যে সংসদটি গণতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করবে, মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষা করবে—সেই সংসদ।” তিনি প্রেস ক্লাবে সভায় আরও বলেন, “এই সরকার কোথাও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা — যা এই জাতিকে একত্র করেছে — তাকে ভুলিয়ে দিতে নানা চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “বছরগুলো ধরে জাতীয় জীবনে নানা আন্দোলন হয়েছে, ত্যাগ হয়েছে; সেই ইতিহাসকে ক্ষুণ্ন করা রাজনৈতিক কৌশল হলে আমরা তা মেনে নেব না।” মেজর (অব.) হাফিজ আগাম সতর্ক করে জানান, ক্ষমতায় যেতে কোনো ধর্মভিত্তিক বা অন্য কোনো সংগঠন যদি মুক্তিযুদ্ধের নৈতিকতা ও ঐতিহ্যকে হেয় করার চেষ্টা করে, তা জনসম্মুখে প্রতিহত করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ‘জুলাই সনদ’ ও সংবিধান সংশোধন নিয়ে নানা মতামত প্রকাশ্যে আসে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও মনে করেন, দ্রুত সংসদীয় কার্যক্রম ও নির্বাচনী প্রস্তুতি জাগ্রত রাখাই সবচেয়ে জরুরি—এতে দেশ দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে ফিরে যেতে পারবে। মেজর (অব.) হাফিজের এই বক্তব্যকে এতেই ধরা হচ্ছে যে, বিএনপির অংশবিশেষ এখন সংবিধান সংশোধনের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে অতিরিক্ত জোর না দিয়ে সংসদীয় ব্যবস্থাকে সক্রিয় করার উপর জোর দিচ্ছে।
সভায় মেজর (অব.) হাফিজ আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির ভিত্তি। এতে কারো কোনো সমঝোতা বা ছাড় নেই—এখানে রাজনীতি নয়, জাতীয় মর্যাদা জড়িত।” তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, আগামীদিনে যদি কারও পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিহীন বা ইতিহাস বিকৃত করার প্রচেষ্টা দেখা দেয়, যৌথভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকর্মী, বিএনপির অন্যান্য শীর্ষ নেতা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা; তারা মেজর (অব.) হাফিজের বক্তব্যকে সমর্থন জানান এবং জাতির ঐতিহ্য ধরে রাখার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেন।


