
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির আরও বিস্ময়কর তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জানা গেছে, গত ২৬ জুন তিনি ও তাঁর সহযোগীরা গ্রিন রোডে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখান এবং মব হামলার হুমকি দিয়ে গলায় জুতার মালা পরানোর ভয় দেখান। এ সময় তারা আজাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার চেক ও একটি জমির দলিল আদায় করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক অভিযানে রিয়াদের ঢাকার নাখালপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে আরও চারটি চেক উদ্ধার করা হয়, যার মোট মূল্য দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
তদন্তে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া চারটি চেকও সাবেক এমপি আজাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। আরও আড়াই কোটি টাকার চেক রিয়াদের সহযোগীদের কাছেই রয়েছে, এবং তাদের নাম-পরিচয় পুলিশ শনাক্ত করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সূত্র জানায়, আজাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা পাঁচ কোটি টাকার চেকগুলো ‘নিট জোন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির নামে ইস্যু করা হয়। চেকগুলো আগস্ট মাসে ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা ছিল, তবে এতে প্রাপকের নাম উল্লেখ না থাকলেও স্বাক্ষর ও টাকার অঙ্ক লেখা ছিল।
এর আগে, গত ২৬ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। বর্তমানে রিয়াদসহ চারজন সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। রিমান্ডে থাকা অন্যরা হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না (২৪), সদস্য সাকাদাউন সিয়াম (২২) ও সাদাব (২১)।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বেই কয়েক মাস আগে আত্মপ্রকাশ করে নতুন ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। তার আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে রিয়াদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছিল।
ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান জানান, গুলশানের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের পর পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রিয়াদের বাসা থেকে চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় কলাবাগান থানায় আরেকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, “ভুক্তভোগীরা যদি আগেই পুলিশকে জানাতেন, তাহলে এসব ঘটনা ঠেকানো যেত। কেন তাঁরা চাঁদা দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও দলীয় পরিচয় নয়, অপরাধই মূল বিষয়। তদন্ত চলছে—আর কেউ জড়িত কি না, তা উদঘাটন করা হবে।”
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ জুন রিয়াদের নেতৃত্বে ১০–১২ জনের একটি দল আজাদের অফিসে ঢুকে চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে ২০০ জনের একটি বাহিনী দিয়ে হামলার হুমকি দেয়। তারা এমপির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের দোহাই দিয়ে চাপ তৈরি করে এবং অবশেষে চেক ও জমির দলিল নিয়ে চলে যায়।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, “রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা অন্য কোথায় কোথায় চাঁদা দাবি করেছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”