বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোট গঠন নিয়ে আলোচনা যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন নতুন আলোচনায় এসেছে ছাত্র নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক শক্তি ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি)। দলটি আগামী নির্বাচনে বিএনপি নাকি জামায়াত— কোন শক্তির সঙ্গে জোট করবে, নাকি এককভাবে মাঠে নামবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জোর আলোচনা।
দলীয় সূত্র বলছে, এনসিপি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও বিএনপি ও জামায়াত— উভয় দলের সঙ্গেই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালাচ্ছে। তবে দলটির অভ্যন্তরে মতভেদ রয়েছে দুই দিক নিয়ে—
একটি পক্ষ বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা চায়,
অন্য একটি পক্ষ জামায়াতের সঙ্গে মাঠে নামতে আগ্রহী,
আর তৃতীয় একটি অংশ বলছে, এনসিপির উচিত এককভাবে নির্বাচন করা।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বিবিসির কাছে বলেন—
“আমরা কারো সঙ্গে জোটে যাচ্ছি নাকি এককভাবে নির্বাচন করবো— সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”
বিএনপির সঙ্গে জোট নিয়ে দ্বিধা
বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক সবসময় স্থিতিশীল ছিল না। রাষ্ট্র সংস্কার, অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে এনসিপি নেতারা অনেক সময় বিএনপির সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে বিএনপিও এনসিপিকে রাজনৈতিকভাবে অপ্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে উভয় দলেরই এখন বাস্তব রাজনীতিতে কৌশলের জায়গা খোলা রেখেছে।
এনসিপির একটি অংশ মনে করে—
“বিএনপি যদি কমপক্ষে ৩০-৪০টি আসন ছাড়ে, তবে জোটে যাওয়ার সুযোগ আছে।”
তবে দলের অন্য অংশ বলছে—
“বিএনপির সঙ্গে গেলে স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থীর ঝামেলা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন—
“রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। নির্বাচনের আগে মাঠ পরিস্থিতি দেখে তখন সিদ্ধান্ত হবে।”
জামায়াতের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে
একসময় জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির ঘনিষ্ঠতা দেখা গেলেও জুলাই সনদ ও পিআর সিস্টেম নিয়ে দু’দলের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়। তবুও আলোচনা থামেনি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন—
“এনসিপির সঙ্গে সমঝোতা বা জোট হওয়ার সুযোগ আছে। আলোচনা চলছে। সময় গেলে বিষয় পরিষ্কার হবে।”
এনসিপির তৃতীয় ভাবনা: আলাদা ‘মধ্যপন্থী জোট’?
দলটির ভেতরে আরও একটি চিন্তা কাজ করছে—
বিএনপি-জামায়াত ছাড়া তৃতীয় একটি জোট তৈরি করা।
যদি পিআর সিস্টেম বা আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি নির্বাচনে যুক্ত হয়, তাহলে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে এনসিপি। সম্ভাব্য এই জোটে বিএনপি বা জামায়াতের বিদ্রোহী নেতারাও আসতে পারেন—এমন ধারণাও দলটির অভ্যন্তরে রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
“এনসিপি যদি নিজস্ব জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চায়, তবে তাদের উচিত এককভাবে নির্বাচন করা। জোটে গেলে তারা প্রভাব হারাতে পারে।”


