ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজউকের প্লট দুর্নীতি সংক্রান্ত ছয়টি মামলার রায় নভেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। আদালত ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ এক আসামির আত্মসমর্পণের ঘটনায় মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মোমেন আশা প্রকাশ করেছিলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর রায় অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ঘুরে গেছে।
হঠাৎ করেই গত ২৯ অক্টোবর (বুধবার) রাজউকের বরখাস্ত হওয়া সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার আত্মসমর্পণের ফলে নতুন করে সাক্ষী রিকল বা পুনরায় জেরা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা মামলার রায় বিলম্বের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে প্রসিকিউশন টিম।
কূটকৌশল নাকি আইনগত অধিকার?
প্রসিকিউশন কর্মকর্তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনা পরিবারের পক্ষে বিচার বিলম্বিত করার “আইনি কৌশল” হিসেবে আসামিরা একে একে আত্মসমর্পণ করে সাক্ষী রিকল প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এভাবে মামলার শুনানি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, “মামলাটি দালিলিক সাক্ষ্যনির্ভর। আসামি আত্মসমর্পণ করলে তার বিষয়ে দেওয়া সাক্ষ্য রিকল করার অধিকার আইনত রয়েছে। তবে এতে কিছুটা বিলম্ব হলেও বিচার চলবে।”
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারা অনুযায়ী আদালত প্রয়োজনে যে কোনো পর্যায়ে সাক্ষীকে পুনরায় হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। আইনজীবীরা বলছেন, আসামির আত্মসমর্পণের পর এই ধারা প্রয়োগের ফলে সাক্ষ্যপ্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হতে পারে।
আত্মসমর্পণকারী আসামি খুরশীদ আলমের আইনজীবী এডভোকেট শাহীনুর রহমান বলেন, “আমি এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি সাক্ষী রিকল করব কি না। রেকর্ড পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজন মনে হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে করব।”
দীর্ঘ শুনানি, জটিল মামলা
গত ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ ২৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ঢাকার চতুর্থ ও পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। এরপর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে একাধিক ধাপে।
-
১১ আগস্ট: তিন মামলার তিন বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
-
২৬ আগস্ট – ৩০ সেপ্টেম্বর: মোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন
-
১৫ অক্টোবর: সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছায়
তবে নতুন আত্মসমর্পণের ঘটনায় সাক্ষী পুনরায় জেরা করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে নভেম্বরের পর পর্যন্ত গড়াতে পারে।
পটভূমি: শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুদক শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তাদের সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ছয়টি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে ২০২৫ সালের মার্চে ৬টি মামলার চার্জশিট অনুমোদন করা হয়।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—
শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, ও আজমিনা সিদ্দিক।
এছাড়া রাজউক ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী প্রশাসনিক ব্যক্তিরাও এই মামলায় আসামি।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দে স্বচ্ছতা ও আইনগত ন্যায্যতা লঙ্ঘন করা হয়েছে।”
রায় কবে?
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণের কারণে মামলার রায় নভেম্বরের মধ্যে দেওয়া সম্ভব নয়। বিচার প্রক্রিয়া কিছুটা পেছালেও ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে রায় ঘোষণার আশা করা হচ্ছে।


