ফিলিস্তিনি বন্দিকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁসের পর ইসরাইলি সেনার শীর্ষ আইনি কর্মকর্তার পদত্যাগ
তেল আবিব, ৩১ অক্টোবর ২০২৫:
ফিলিস্তিনি এক বন্দিকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রধান আইনি কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইফাত টোমার-ইয়েরুশালমি। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে ওই নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের অনুমতি তিনিই দিয়েছিলেন বলে পরে স্বীকার করেন টোমার-ইয়েরুশালমি। ভিডিওটি প্রকাশের পর ইসরাইলজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়, এবং আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ভিডিও ফাঁসের পর ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সেনাদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে তদন্তের অংশ হিসেবে সামরিক আদালতে তাদের হাজির করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই ইসরাইলের ডানপন্থি রাজনীতিকরা সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। এমনকি তদন্তকারীরা যখন দুইটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তখন ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা ওই ঘাঁটিতে হামলাও চালায়।
ভিডিওটি প্রথমে ইসরাইলের এন১২ নিউজ চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এতে দেখা যায়, কয়েকজন ইসরাইলি সেনা একজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে জোরপূর্বক একটি স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন, আর চারপাশে অস্ত্রধারী সেনারা দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর ভিডিওর ফ্রেমের বাইরে বন্দির ওপর নির্যাতনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যদিও নির্দিষ্টভাবে দৃশ্যটি দেখানো হয়নি।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বুধবার সাংবাদিকদের জানান, “এই ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ ফৌজদারি তদন্ত চলছে এবং সেনা আইনি বিভাগের প্রধান টোমার-ইয়েরুশালমিকে সাময়িকভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।”
পদত্যাগপত্রে মেজর জেনারেল টোমার-ইয়েরুশালমি লিখেছেন,
“আমি কোনো অবৈধ কাজ করতে চাইনি বা কাউকে রক্ষা করিনি। বরং সেনাবাহিনীর আইনি কাঠামোকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েই কাজ করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় সেনাবাহিনীর আইনি বিভাগটি রাজনৈতিক অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধকালীন সময়ে আইন প্রয়োগের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন, বিশেষ করে যখন সমাজ বিভক্ত ও উত্তেজিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদত্যাগ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ভেতরে চলমান নৈতিক সংকট ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নকে আরও উস্কে দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, গাজা উপত্যকায় চলমান সামরিক অভিযানের সময় ইসরাইলি বাহিনীর হাতে বন্দিদের ওপর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘটনাটির স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।


